লাখো লাখো বিষয় আর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছে কুরআন। তবে কুরআন আমাদের জীবনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো একটির-পর-একটি আলোচনা করেনি। বরং জীবনের সকল প্রয়োজনের কথা আল্লাহ ছড়িয়ে রেখেছেন পুরো কুরআন জুড়ে। জীবনের পাথেয় গুছিয়ে নিতে আমরা যখন কুরআনের অনুবাদ পড়তে যাই, তখন কখনো কখনো এমন হয় যে, আমরা ঠিক বুঝেই উঠতে পারি না—কুরআন কোন প্রসঙ্গে আমার সাথে কথা বলছে? কোন প্রেক্ষাপটে আলোচনা করছে? ‘সে’ আর ‘তুমি’ সম্বোধন দ্বারা কুরআন কাকে বোঝাচ্ছে? আবার এমনও হয়—কিছু আয়াত পরপর প্রসঙ্গ পরিবর্তন হওয়ায় আলোচনার ধারাবাহিকতা বুঝতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই। কিন্তু দেড় হাজার বছর আগে সাহাবায়ে কেরামের জন্য কুরআন হৃদয়ঙ্গম করা ছিল খুবই সহজ। কারণ তাঁদের সামনেই উপস্থিত ছিল এ-সকল প্রসঙ্গ আর প্রেক্ষাপট। তাই তাঁরা কুরআনকে করে নিতে পেরেছিলেন অনেক আপন। বিপরীতদিকে কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক আজ অনেকটাই ফিকে। কারণ কুরআনে-বলা প্রসঙ্গগুলো আমাদের কাছে খানিকটা অস্পষ্ট। কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক জীবন্ত করার সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে এই অনুবাদে যুক্ত করা হয়েছে চমৎকার কিছু বৈশিষ্ট্য।
কোন আয়াত কোন প্রসঙ্গে কথা বলছে, সেই প্রেক্ষাপট বা প্রসঙ্গগুলো তুলে আনা হয়েছে কুরআন-নাযিলের-কাছাকাছি-সময়কার তাফসীর-গ্রন্থগুলো থেকে, আর তা উল্লেখ করা হয়েছে বাংলা অনুবাদের পাশেই। আবার যে আয়াতগুলো মিলে একটি বিষয়ের ভাব প্রকাশ করছে সেগুলোকে আমরা একসাথে রেখেছি, যাতে করে প্রসঙ্গ পরিবর্তনের মোড় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আয়াতের শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অনুবাদের পাশেই উল্লেখ করার কারণে কুরআন অনুধাবন করা অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। এ ছাড়া পার্শ্বটীকায় আরও দেওয়া হয়েছে ওই সূরার মেজর থিম বা মূল আলোচ্য বিষয়গুলো, যা এক-নজরে পড়ে নিলে সূরার ব্যাপারে সার্বিক ধারণা পাওয়া যাবে, সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য মূল পার্শ্বটীকাগুলোকে রঙিন কালিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সাবলীল ও সরল অনুবাদের কারণে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তেও আপনার ক্লান্তি অনুভব হবে না, ইন শা আল্লাহ। বরং আপনি উদ্গ্রীব থাকবেন পরের আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে কী বলছেন তা জেনে নিতে! এই অনুবাদটি সাবলীল ও যথার্থ রাখার প্রয়াসে অনুবাদক মহোদয় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে। এক্ষেত্রে তিনি সাহায্য নিয়েছেন প্রাচীনতম সব তাফসীর, প্রামাণ্য অভিধান ও মাআনি-গ্রন্থগুলোর।
কেবল মাক্কী বা মাদানী না বলে, বরং প্রতিটি সূরার পাশে নাযিলের আনুমানিক সময়কাল ও বিশেষ ঘটনা থাকলে তা উল্লেখ করা হয়েছে; যাতে কুরআন অধ্যয়নকালে সেই সময়ের চিত্রটা কল্পনায় ভেসে ওঠে।
আয়াতের আরবি মূলপাঠে উপমহাদেশে প্রচলিত সহজবোধ্য ও স্পষ্ট হরকত-সমৃদ্ধ এক নতুন ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা দেখতে ঝরঝরে ও পড়তে আরামদায়ক।
হাফেজদের জন্যও রয়েছে বাড়তি সুবিধা : উপমহাদেশে প্রচলিত হিফযুল কুরআনের পৃষ্ঠা-বিন্যাসই এ-অনুবাদে রাখা হয়েছে, যেন হাফেজদের স্মৃতিপটে থাকা পৃষ্ঠা বিন্যাসের সাথে তা মিলে যায়, এতে করে হাফেজগণ তিলাওয়াতের সাথে সাথে অনুবাদও পড়ে নিতে পারবেন খুব সহজে।
‘মিলিয়ে পড়ুন’—শীর্ষক অংশটি আপনাকে তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের ফায়দা দেবে। এ ছাড়াও নাযিলের সম্ভাব্য সময়কাল, শিক্ষা, প্রেক্ষাপট, পার্শ্বটীকা, পাদটীকা—এ-সকল ফিচার মুখতাসার বা সংক্ষিপ্ত তাফসীরের প্রয়োজনও মেটাবে, ইন শা আল্লাহ।